পার্থ প্রতীম নন্দী: এখনও পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তিন ম্যাচ শেষে দুই জয় নিয়ে সাকিব বাহিনী ভালোভাবেই আছে সেমি ফাইনালের দৌড়ে। সেই লক্ষ্যে অ্যাডিলেইডে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত। যেখানে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বিশ্বমঞ্চ থেকে বিদায় করে দিয়ে ইতিহাস গড়েছিল লাল সবুজের বাংলাদেশ।
অ্যাডিলেইড ওভালে বুধবার এই লড়াই শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়। অ্যাডিলেইড সময় তখন হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা, এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের একমাত্র রাতের ম্যাচ।
এই ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ দুই দলের জন্যেই। এছাড়াও বাংলাদেশ-ভারত মানেই এখন বাড়তি উম্মাদনা। যেটির শুরু বলা যেতে পারে ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালের ম্যাচ দিয়ে। অনেক বিতর্কের সেই ম্যাচের পর যেখানেই এই দুইদল খেলেছে দর্শকদের মধ্যে ছিল আলাদা উত্তেজনা। তাই বলা যেতেই পারে দুপুর দুইটায় অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড পদ্মা আর গঙ্গার মতোই এই অঞ্চলের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে উঠবে উথাল-পাতাল ঢেউ। যে ঢেউয়ে কেউ ভাসাবে আশার তরী, কেউ আবার হতাশার ভেলা। আবার হার-জিতের পরও চলবে কথার খেলা।
ভারত ম্যাচের আগে আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব বলছিলেন, ‘পরবর্তী লক্ষ্য দুইটা ম্যাচ খুব ভালোভাবে খেলা। দুইটা ম্যাচের যদি কোনো ম্যাচ জিততে পারি, সেটা আপসেট (অঘটন) হিসেবেই গণ্য হবে। সেই আপসেটটা যদি আমরা করতে পারি, আমরা খুশি হব। আর না করতে পারলেও আসলে খুব বেশি কিছু একটা বলার নেই।'
প্রতিপক্ষ দলে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো ক্রিকেটার আছে এবং অনেকদিন ধরে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ভুগতে থাকার কারণে হয়তো কথাটা বলেছেন সাকিব। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, অনেক বছর ধরেই ভারত-পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে নিয়মিতই জয় পেয়ে আসছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে যায়নি সেটাও পরিস্কার করে বলেছেন সাকিব, ‘আমি আগেও যেমন বলেছি, ভারত ফেবারিট দল। তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেবারিট নই, বিশ্বকাপ জিততে এখানে আসিনি। আমরা ভালো করেই জানি, ভারতের বিপক্ষে জিতলে এটি আপসেট হবে। আমরা চেষ্টা করব সেরা খেলাটি খেলতে এবং আপসেট ঘটাতে।’
তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক যাই বলুন না কেন, ভারত অবশ্য বাংলাদেশকে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখছে। দলটির হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন, বাংলাদেশ খুবই ভালো দল।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় কোচ বলেন, ‘আমরা তাদের অনেক সমীহ করি। তারা খুব ভালো দল। এই বিশ্বকাপ দেখিয়ে দিয়েছে কোন দলকেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেখিয়েছে। এই আসরে অনেক খেলায় এমন দেখলাম।'
দ্রাবিড় বলেন, ‘এছাড়া ২০ ওভারের খেলা এমনিতেই ছোট সংস্করণ। খেলায় জয় পরাজয়ের ব্যবধানটা অনেক সময়ই ১২ থেকে ১৫ রানের হয়। কাজেই দুটো শটেরই ব্যাপার। দুটো শট এদিক-সেদিক হলেই ফল বদলে যায়। কাজেই এটা এমনিতেই সংক্ষিপ্ত উত্তেজনাকর সংস্করণ। এখানে কখনো কখনো কে পরিষ্কার ফেভারিট বলাটা কঠিন। '
কন্ডিশনও দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে দিচ্ছে বলছেন দ্রাবিড়, ‘এই কন্ডিশনে খেলাটায় আরও সমতা চলে আসে কারণ অনেক বড় বাউন্ডারি। উপমহাদেশে কিছু শট অনায়াসে ছক্কা হবে, কিন্তু এখানে এরকম কিছু বড় শট এমনটা সহজে হবে না, আউট হয়ে যাবে।'
বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে এখন পর্যন্ত তিনটি করে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, ভারত। দুই দলই একটিতে হেরেছে দুটিতে জিতেছে। কাল জিতলে সেমিফাইনালের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু হারলে প্রায় ছিটকে পড়তে হবে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে আসতে পারে পরিবর্তন। এই মাঠে স্ট্রেইট বাউন্ডারি বেশ বড়। একজন অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ স্পিনার বড় মাঠে সুবিধা পেতে পারেন। ভারতের টপ অর্ডারের চার ব্যাটার আবার ডানহাতি। বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ দলকে সুবিধা এনে দিতে পারেন। একজন ব্যাটার তথা ইয়াসির রাব্বিকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হতে পারে তাকে।
বাংলাদেশের একাদশে যেখানে এক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সেখানে ভারতের একাদশে দুই পরিবর্তনের জোর আভাস। ইনজুরি আছে দিনেশ কার্তিকের। তাকে বিশ্রাম দিয়ে রোহিতরা একাদশে নিতে পারেন ঋষভ পান্তকে। সঙ্গে লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালকে খেলানোর কথা শোনা যাচ্ছে। কে না জানে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার নাম লেগ স্পিন। সেক্ষেত্রে রবিশচন্দন অশ্বিন বাদ যেতে পারেন।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: সৌম্য সরকার, নাজমুল শান্ত, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ: কেএল রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, হার্ডিক পান্ডিয়া, ঋভষ পান্ত, দিপক হুদা, যুজবেন্দ্র চাহাল, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি, অর্শদ্বীপ সিং।
তবে তাসমান পাড়ে পদ্মা আর গঙ্গার ঢেউ থামিয়ে দিতে পারে বেরসিক বৃষ্টি। বিশ্বকাপ জুড়ে দাপট দেখানো বৃষ্টির প্রতাপ থাকবে এই ম্যাচেও।অ্যাডিলেইডে
রোদ-মেঘ-বৃষ্টির এই পালা চলতে থাকে অবিশ্বাস্য দ্রুততায়।
আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, ওই রোদ-বৃষ্টির খেলা ম্যাচের দিন অর্থাৎ বুধবারও চলবে। ম্যাচ ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকি কম। তবে এই শহরের আবহাওয়া নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছুই বলার উপায় নেই।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, দুপুর দুইটায় ভারতের মুখোমুখি হবেন সাকিবরা। স্থানীয় সময়ে যা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। সূর্যটা চোখ বুঝতেই সেখানে বৃষ্টি নামার পূর্বাভাস আছে। সঙ্গে হু হু করে বইবে চামড়া ভেদ করে হাঁড় বিদ্ধ করা ঠান্ডা।
এতসব চ্যালেঞ্জ জয় করে অ্যাডিলেইডের ফ্লাডলাইটের নিচে
প্রথম ইনিংসের গড় রানটাও ১৭০ ছোঁয়া। তাই বলা যেতে পারে, ম্যাচ মাঠে গড়ালে আরো একটি ভারত বাংলাদেশের উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথ দেখবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
নিউজনাউ/পিপিএন/২০২২