চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পেরিয়ে ৭৬তম বছরে পা দিল দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে আছে ছাত্রলীগের নাম। তবে, গৌরবোজ্জ্বল এ সংগঠনের হাল যেন ‘বেহাল’ চট্টগ্রামে।
৯ বছর আগে কমিটি গঠনের পর দশবার পালিত হয়েছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিরও রদবদল হয়েছে পাঁচবার। শুধু হয়নি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের কমিটিই। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর গঠিত হওয়া নগর ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটির ‘এক বছর’ যেন শেষই হচ্ছে না।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০ ধারার খ-উপধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। জেলা শাখাকে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বাড়ানো যাবে। এ সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তবে ছাত্রলীগের এই গঠনতন্ত্রের ধার ধারছে না চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের বর্তমান নেতারা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বৈরি পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরশাদের সামরিক শাসনামলের শুরুর দিকেও সম্মেলন হয় একবার। কিন্তু এরপর কঠিন পরিস্থিতি পার করে সুসময়েও আর সম্মেলনমুখী হয়নি সংগঠনটি।
হিসেব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আট বছর দুই মাস আগে। বর্তমানে কমিটির সদস্যরা কাগজে–কলমে এখনো পদ আঁকড়ে আছেন। অনেকে সংসার জীবনে পদার্পণ করে হয়েছেন ছেলে-মেয়ের বাবাও। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের মধ্যে কোন্দল প্রকট হয়ে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলতা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘসময় দায়িত্বে থাকায় নেতারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষাতেও নতুন কমিটি না আসায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেকটা ভাটা পড়েছে।
সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর চট্টলার ছাত্রলীগের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। নেতৃত্ব তৈরির ‘প্লাটফর্ম’ নগর ছাত্রলীগের এমন দৈন্যদশা কাম্য নয়।
জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘একটি কমিটি বেশিদিন রানিং করা নেতৃত্ব বিকাশের অন্তরায়। অনেক সময় দেখা যায়, গঠনতন্ত্র মেনে ধারাবাহিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অভাবে অনেক যোগ্য নেতৃত্ব হারিয়ে যায়। সাংগঠনিক নেতৃত্বগুণ থাকার পর ও নেতৃত্বে আসতে না পেরে তারা হতাশ হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। এভাবে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়।’
সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘আমরা তিন-চার বছর ধরেই চেষ্টা করছি নগর সম্মেলন করতে। কিছু সমস্যা থাকার কারণে করা যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা পেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই সম্মেলন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। যেহেতু সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তাই নগরের সম্মেলন কবে নাগাদ হতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছি না।’
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, শিগগিরই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এসে দলকে চাঙা করতে হবে।
নিউজনাউ/জেআর/আরএইচআর/২০২৩