নিউজনাউ ডেস্ক: দীর্ঘকাল পরে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমকে (৪৭) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। হামলার সময় সরাসরি সমাবেশের মঞ্চ উদ্দেশ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিলেন তিনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। তৎকালীন সময়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশ হচ্ছিলো। হঠাৎ করেই বোমার বিকট আওয়াজ। কেঁপে উঠলো চারপাশ। হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।
এই গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডিত ৩৩ আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক ছিলেন ১৬ জন। ইকবাল গ্রেফতার হওয়ায় এখন পলাতক রইলেন ১৫ জন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত।
জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের নির্দেশে ইকবাল হোসেন গ্রেনেড হামলায় জড়িত হন। হামলার পর আত্মগোপনে গিয়ে কখনো নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক আবার কখনো রিকশার মেকানিক হিসেবে ছদ্মবেশে জীবনযাপন করতে থাকেন। একপর্যায়ে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ম্যানুয়াল পাসপোর্টের সুযোগ নিয়ে ভিন্ন পরিচয়ে বিদেশে চলে যান তিনি।
গত বছরের শেষের দিকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আসামিদের নজরদারির ধারাবাহিকতায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) দেওয়া তথ্যমতে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ আভিযানিক দল জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
গ্রেফতার পলাতক জঙ্গি ইকবালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব ডিজি বলেন, এইচএসসি পাস ইকবাল স্কুল-কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইকবাল ১৯৯৪ সালে ঝিনাইদহ কেসি কলেজের ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কর্মজীবী হিসেবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন।
দেশে ফিরে ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্য ব্যবসা শুরু করেন। এসময় সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে যান। ২০০১ সালে স্থানীয় এক জঙ্গি সদস্যের মাধ্যমে তিনি হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে (হুজিবি) যোগ দেন। ২০০৩ সালে হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে এসে প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। ২০০৪ সালে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় আসেন এবং গোপন আস্তানায় অবস্থান করেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মুফতি হান্নানের নির্দেশে সরাসরি অংশ নেন জানিয়ে র্যাব প্রধান বলেন, মুফতি হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন। হামলার সময় সরাসরি মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন তিনি। ঘটনার পররপরই তিনি আত্মগোপনে ঝিনাইদহে চলে যান।
এরপর জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতার করতে একাধিক অভিযান পরিচালিত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে তাকে গ্রেফতারে ঝিনাইদহের নিজবাড়ি, গাজীপুর, সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। আত্মগোপনে থাকাকালীন ইকবাল নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিক হিসেবে ছদ্মবেশে জীবনযাপন করেন। তাকে গ্রেফতারে ধারাবাহিক অভিযানের একপর্যায়ে প্রবাসে পাড়ি জমান। ২০২০ সালের শেষের দিকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাকে দেশে পাঠানো হয়।
এনএসআই এবং র্যাবের গোয়েন্দা শাখা জঙ্গি ইকবালের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতার করা হয়।
নিউজনাউ/এবিএ/২০২১