alo
ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ১, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

কে হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি?

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর, ২০২২, ০৩:৪০ পিএম

কে হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি?
alo


রিগান ভূঁইয়া: দেশের বর্তমান ২১তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৩ সালের এপ্রিলে। এরপর নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্বগ্রহণ করবেন। সে বিবেচনায় আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু এবং শেষ হওয়ার কথা। তাই রাজনৈতিক মাঠে এখন থেকেই জোর গুঞ্জন কে হচ্ছেন বাংলাদেশের আগামীর রাষ্ট্রপতি!

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার সংসদ সদস্যরা। বর্তমান জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকারী আওয়ামী লীগ। ফলে সে দলের মনোনীত প্রার্থীই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হবেন। স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে মূল ভূমিকা রাখবেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি এ ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেননি বা কিছু বলেননি।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন না। তাই তৃতীয় মেয়াদে আবদুল হামিদ যে আর রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হলে নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবে? 

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পাঁচ বছরের মেয়াদ এ বছরের ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। আর সংবিধান অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানে পূর্ববর্তী ৯০ হতে ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কাকে দলের প্রার্থী করা হবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ইতোমধ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম আলোচিত হচ্ছে। 

দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় আছে তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ আলোচনায় রয়েছেন ছয়বারের এমপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। একজন সৎ, স্পষ্টবাদী ও উদার মনোভাবের মানুষ হিসেবে নিজ দলের নেতাকর্মীসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের নিকট তার সুনাম রয়েছে। চট্টগ্রাম তো বটেই সারাদেশেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এছাড়া প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন। তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য।

এইসব বিবেচনা ছাড়াও তাঁর অভিভাবকত্বে চট্টগ্রামের মতো পলিটিকালি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। তাঁর সমসাময়িক এবং বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের সময়কার জীবিত নেতাকর্মী হিসেবে এখনও তিনি সমান পারদর্শিতায় দলকে গুছিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠকের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অসামান্য অবদানের পর অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গঠনেও তাঁর ভূমিকা অনন্য। আর রাজনৈতিকভাবে তিনি লড়েছেন একেবারে সামনের কাতারে থেকেই। ৮৮ সালে ২৪শে জানুয়ারী শেখ হাসিনার মিছিলে পুলিশ কর্তৃক গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করার ঘটনায় তিনিও মারাত্মকভাবে আহত হন। ৯২ সালের ৮ মে ফটিকছড়িতে জামায়াত ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হয়ে অলৈাকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা মিরসরাইয়ে স্থানীয়দের আস্থার প্রতীক হয়ে বার বারই জাতীয় সংসদে করেছেন এলাকার প্রতিনিধিত্ব। এছাড়াও চট্টগ্রামের জাতীয়, মেয়র নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে তার কৌশলে এগিয়ে বারেবারে সফল হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তাই বর্ষীয়ান এই প্রবীণ নেতা আগামীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এগিয়ে থাকবেন সেটা বলছেন দলটির তৃণমূল থেকে শুরু করে নিতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। 

এছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আলোচনায় বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও উচ্চারিত হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী হতে পারেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। এর পিছনে একাধিক যুক্তি দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন যে, শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার। এর আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্পিকার থেকে হয়েছিলেন। শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত। এজন্য তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী শিক্ষিত এবং রাষ্ট্রপতি হলে তিনি দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে পারবেন, এটি সম্মানজনক হবে। তবে অনেকেই মনে করছেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী এখনো তরুণ এবং তার অনেক পথ বাকি আছে। তাছাড়া স্পিকার হিসেবে তিনি যথেষ্ট ভাল করছেন। এইরকম পরিস্থিতিতে তাঁর মতো আরেকজন ভালো স্পিকার খুঁজে বের করার আগেই তাকে রাষ্ট্রপতি পদ দেয়া হবে কিনা, এ নিয়ে কারো কারো সংশয় রয়েছে তারা মনে করছেন। 

তারা মনে করছেন যে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে শিরীন শারমিনের মত তরুণ কাউকে নয় বরং প্রবীণ কোনো নেতাকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করতে পারে। তবে এরকম কে আছে তা নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম বিতর্ক-সংশয় রয়েছে। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ হয়তো দলের বাইরে তাঁদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকেও মনোনয়ন দিতে পারেন এরকম বিবেচনা থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর নামও এসেছে। তবে এই সমস্ত নামগুলো খুব একটা বড় পরিসরে আলোচিত হচ্ছে না। তাছাড়া দলীয় নেতার বাইরে এভাবে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন আওয়ামী লীগ দিবে কিনা, সে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে হয়তো দলীয় কাউকেই দেয়া হতে পারে। 

তবে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কে হবেন সেটি প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্ধারণ করবেন। এখন পর্যন্ত নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাজনৈতিক পাড়ার আড্ডায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও শিরীন শারমিন চৌধুরীই এগিয়ে আছেন।

নিউজনাউ/পিপিএন/আরবি/২০২২

X