alo
ঢাকা, বুধবার, মার্চ ২২, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

মসজিদে কুপিয়ে হত্যা, কাটা পা নিয়ে উল্লাস

নির্মমতার ঘটনা শুনিয়ে কেঁদেছেন কাঁদিয়েছেন

প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট, ২০২২, ০৭:৩৮ পিএম

মসজিদে কুপিয়ে হত্যা, কাটা পা নিয়ে উল্লাস
alo

 

 

 

চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ কক্সবাজারের টেকনাফে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন লবণচাষী নুরুল হক ভূট্টো। গত ১৫ মে  তাকে ঘেরাও করে মসজিদে কুপিয়ে হত্যার পর তার কাটা পা নিয়ে এলাকায় উল্লাস করেছে ঘটনার মূলহোতা একরামসহ অন্য খুনিরা। যদিও এই ঘটনার সকল আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। উপরন্তু এক আসামি ফেসবুকে লাইভে এসে পরিবারের অন্যদের হত্যার হুমিক দিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ভবনের এস রহমান হলে আসামিদের বিচার সহ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে এইসব কথা বলেন ভুট্টোর ভাই ছোট ভাই নুরুল ইসলাম নুরু।

তিনি বলেন, আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যার পর খুনিরা তার ডান পা কেটে কাঁধে নিয়ে উল্লাস করতে করতে চলে যায়। আমার ভাইকে দাফন করতে হয়েছে ডান পা ছাড়াই। এখনো তারা আমার ভাইয়ের সেই পা ফেরত দেয়নি। অথচ বেশিরভাগ আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

সংবাদ সম্মেলেনে পরিবারের সদস্যের কোলে বসে ছিল ভুট্টোর আড়াই মাস বয়সী মেয়ে শাহিদা হক। যার জন্ম হয়েছে বাবাকে হত্যার দুইদিন পর। আরও উপস্থিত ছিলেন শাহিদার তের বছরের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম, সাত বছর বয়সী বোন আয়েশা সিদ্দিকা ও তাদের মা নাসরিন সুলতানা। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সূদুর টেকনাফ সদর ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ড নাজির পাড়া থেকে এসেছেন তারা।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত নুরুল হক ভুট্টোর আরেক ভাই নুরুল ইসলাম নুরু, তাদের মা আবেদা খাতুন, সাবেক ওসি প্রদীপ এর হাতে ক্রসফায়ারের শিকার ভুট্টোর বড় ভাই নূর মোহাম্মদের স্ত্রী লায়লা বেগম, ভাগিনা বেলাল, নুরুল আবছার এবং এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরোয়ার কাবেরী।

নিহত নুরুল হক ভুট্টোর ছোট ভাই নুরুল ইসলাম নুরু লিখিত বক্তব্যে গণমাধ্যমকে জানায়, চলতি বছরের ১৫ মে আমার বড় ভাই নুরুল হক ভুট্টোকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী’ একরাম ও তার সহযোগীরা। সেদিন পাশের সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোসেনের অনুরোধে একটি মোটর সাইকেল এক্সিডেন্টের শালিসে আমার ভাই ভাগিনাসহ যান। শালিস থেকে বাসায় ফেরার পথে সাবরাং ইউপি'র বড় হাবিরপাড়া থানার ডেইল এলাকায় তাদের উপর হামলা হয়।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমার ভাই হামলার মুখে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে একটি মসজিদে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন কিন্তু হামলাকারীরা চাইনিজ কুড়াল এনে মসজিদের দরজা কেটে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত করার পর হত্যাকারীরা আমার ভাইয়ের ডান পায়ের হাটুর নিচের অংশ কেটে কাধে নিয়ে বিজয় উল্লাস করতে করতে চলে যায়। আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের ভাইয়ের পা হিন্দু ধর্মালম্বীদের চিতায় পুতে ফেলেছে। আমার ভাইকে দাফন করতে হয়েছে এক পা ছাড়াই।

তিনি আরও বলেন, এর আগে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৮ নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদে প্রার্থী হন আমার চাচাতো ভাই এনামুল হক। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন একরামের চাচা আলী আহমদ। এলাকায় আমার ভাইয়ের পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে নির্বাচনে আমার চাচাতো ভাই বিপুল ভোটে জয়ী হন। মূলত সেই থেকেই আমার ভাইয়ের উপর ক্ষুদ্ধ ছিল একরাম ও তার বাহিনী।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরদিন ১৭ জনকে এজহারভুক্ত এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৮ থেকে ১০ জনকে আসামী করে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলার সূত্রে পুলিশ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল আসামি ইয়াবা সম্রাট একরামসহ বেশিরভাগ আসামীকে গ্রেপ্তার করেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে আসামিরা আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এতে আমার পরিবার  অনিরাপদ বোধ করছে। পরিবারের নিরাপত্তা ও ভাইয়ের হত্যার বিচারের জন্য গণমাধ্যমের সাহায্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকূল আবেদন জানাচ্ছি।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভাই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি একরাম এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। অথচ এর আগে ২০১৮ সালে নামের সঙ্গে মিল থাকায় স্থানীয় কাউন্সিলর একরামকে আটক করা হয়। পরে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। যে ঘটনার একটি ভয়েস রেকর্ডিং সাড়া ফেলেছিল দেশজুড়ে।

তিনি বলেন, ভূট্টো হত্যার দুই বছর আগে তার আরেক ভাই নুর মোহাম্মদকেও কথিত বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা হয়েছে স্ত্রীর সামনেই।এর জন্য তিনি, মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দায়ী করেন। 

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২২ মার্চ নূর মোহাম্মদকে ওসি প্রদীপ ধরে নিয়ে ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তাকে রাতের বেলা কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় আমার ভাবী লাইলা বেগম নিজের স্বামীকে বাঁচাতে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তার সামনেই তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মেজর সিনহা হত্যার পর তারাও ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।

 

ইয়াবা সম্রাট একরামের জীবন বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, হত্যা মামলা, মানিলন্ডারিংসহ টেকনাফ থানায় ১৩টি ও কক্সবাজার সদর থানায় ৩টি মামলা রয়েছে।

মামলায় উল্লেখীত আসামিরা হলেন, আসামিরা হলেন- একরাম প্রকাশ একরাম ডাকাত (৩৫), আব্দুর রহমান (৩৫), আব্দুর রাজ্জাক (৩৮), মোহাম্মদ রিদুয়ান (২৮), তৌকির আহমদ (৩০), নুরুল আলম(৪০), মো. সাদ্দাম (৩০), আব্দুল আমিন (৩২), হাজী ফজল আহমদ (৬৫), আলী আহম্মদ (৬০), আবু বকর প্রকাশ ভক্কো (৩০), রহীমুল্লাহ (২৮), আব্দুল খালেক (২৮), মো. আবদুল্লাহ (৪০), বশির আহমদ (৪৫), সাইফুল ইসলাম, ফয়সালসহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন।

নিউজনাউ/পিপিএন/২০২২

X