alo
ঢাকা, বুধবার, মার্চ ২২, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

তরুণীদের প্রেমের জালে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতো তারা

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ, ২০২৩, ০৮:৫৯ পিএম

তরুণীদের প্রেমের জালে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতো তারা
alo

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্ধশতাধিক তরুণীর ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারন করে ব্ল্যাকমেইল এবং পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদানের অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৭।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) পেকুয়ার চৌমুহনী বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুই যুবক হলেন, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানার রাজাখালী গ্রামের মো. জহির উদ্দিন (৩২) এবং একই থানার মিয়ারপাড়া গ্রামের মো. সরোয়ার (২৪)।

র‍্যাব জানায়, ভুক্তভোগী ভিকটিম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া এলাকায় বসবাস করতেন এবং পেকুয়া উপজেলায় একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। আসামি জহিরুলের সাথে তার মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। জহিরুল ভিকটিমের কাছে নিজেকে সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয় এবং নিজেকে অবিবাহিত বলে জানায়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের সৃষ্টি হলে জহিরুল ছবি দেয় ভিকটিম। পরবর্তীতে জহিরুল ভিকটিমকে জানায় তাকে তার ও তার পরিবারের পছন্দ হয়েছে এবং সে তাকে বিয়ে করবে। 


জহিরুলের পরিবার তার পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরবর্তীতে আসামী জহিরুলের অনুরোধে পেকুয়া চৌমুহনী এলাকায় জহিরুলের সাথে ভিকটিম দেখা করে। কথা বলার একপর্যায়ে জহিরুল ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে তার মোবাইলের গ্যালারি থেকে ব্যাক্তিগত কিছু ছবি ও ভিডিও তার মোবাইলে নিয়ে নেয়। ওইদিন রাতে জহিরুলের সাথে ভিকটিমের ভিডিওকলে কথা হয়। পরবর্তীতে জহিরুল তার মোবাইলে ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে এবং ভিকটিমকে তার নগ্ন ছবি ও ভিডিও চিত্র পাঠাতে চাপ দেয় এবং না দিলে তার কাছে রক্ষিত ছবিগুলো সে তার এলাকার লোকজন সহ অফিসের বস, কলিগ ও আত্মীয়স্বজনকে দেখাবে বলে বিভিন্ন রকমের ভয়-ভীতি দেখায়। 

ভিকটিম ভয়ে জহিরের হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোতে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের কিছু ছবি পাঠায়। পরবর্তীতে জহিরুল ভিকটিমকে তার সাথে হোটেলে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতে প্রস্তাব দেয় এবং তাতে রাজী না হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ভিকটিম আসামীর কু-প্রস্তাবে রাজী না হলে জহির তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ভিকটিমের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় জহির তার মোবাইল থেকে তার সহযোগী আসামি সরোয়ারের মোবাইল সহ বিভিন্ন যায়গায় ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিওচিত্র পাঠায়। 

অপর আসামি সরোয়ার ভিকটিমকে ফোন করে বলে তার কাছে ভিকটিমের কিছু ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি আছে এবং তাকে ৫০ হাজার টাকা না দিলে ঐ ছবি এবং ভিডিও সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। এক পর্যায়ে আসামি জহিরুল ভিকটিমের চাচাতো ভাইয়ের কাছে সেগুলো পাঠায়। ভিকটিম তার চাচাতো ভাইকে এই ঘটনা খুলে বললে সে র‍্যাবের কাছে অভিযোগ জানায়।

র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার জানান, অভিযোগ পেয়ে তারা আসামিকে ধরতে তৎপর হয় এবং অভিযান পরিচালনা করে এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। 

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ভিকটিমকে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় ভীতি প্রদর্শনের কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, ভিকটিম জানিয়েছে আসামি জহির ভিকটিমের অন্য একজন নারী সহকর্মীর সাথেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তার ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। পরবর্তীতে সে সামাজিক মান সম্মানের ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল। 

গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বরাতে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, তারা পরস্পর যোগসাজসে প্রেমের মায়াজালে ফেলে প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীর ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারন করে ব্ল্যাকমেইল করত এবং পরবর্তীতে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে তাদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিত। আসামিদের ব্যক্তিগত মোবাইল তল্লাশী করে অসংখ্য ভিকটিমের ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি ও ভিডিওচিত্র পাওয়া যায় এবং তারা অসংখ্য মেয়ের সাথে এরকম অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছে।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

নিউজনাউ/আরএইচআর/২০২৩
 

X