নিউজনাউ ডেস্ক: মদ খাওয়া, ওভার টেকিংসহ পাঁচ ধরনের অপরাধে প্রতিবার চালকের এক পয়েন্ট করে কাটা যাবে। আর মোট ১২ পয়েন্ট কাটা গেলেই বাতিল হবে চালকদের লাইসেন্স। পরবর্তীতে ওই চালক আর লাইন্সেন্স পাবেনা। ৫০ ভাগ ম্যানুয়ালি অর্থাৎ পুলিশ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে। বাকি ৫০ ভাগ ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত। এমন আইন করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বিধিমালা অনুযায়ী।
রবিবার (১৫ জানুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির বনানী কার্যালয়ে ‘বিআরটিএ’র ডিজিটাল সেবা প্রদান সংক্রান্ত মতবিনিময় এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ অবহিতকরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সড়ক আইনের বিধিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে চালকের যোগ্যতা হতে হবে পঞ্চম শ্রেণি পাস। আর সুপারভাইজরের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। গাড়ির সামনের অংশ ১৫০ মিলিমিটার থেকে কমিয়ে ১০০ মিলিমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে কর্মশালায় জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে পুলিশের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) ফারুক আহমেদ ও শেখ মোহাম্মদ মাহবুবই-রব্বানী (পরিচালক) রোড সেফটি।
এতে বলা হয়, ২০২২ সালে ৫ হাজার ২০০ সড়ক দুর্ঘটনায় চার হাজার ৬৩৮ জন নিহত ও চার হাজার ৬৪৮ জন আহত হয়েছে। পাশাপাশি চারটি বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে সড়ক বিভাগ ও বিআরটিএ কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পুলিশ কেন্দ্রীয়ভাবে দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে। যা সঠিক ও বস্তুনিষ্ট। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে মামলা বা জিডি হয়ে থাকে। কাজেই পুলিশ বিভাগের সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যুর সংখ্যার কোনো ভুল হওয়ার সুযোগ নেই।
এতে বলা হয়, ১০ হাজার গাড়ির বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনার হার ৯ দশমিক ৩০ ভাগ। আর ১০ হাজার গাড়ির বিপরীতে মৃত্যু আট দশমিক ১৯ ভাগ। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় দুই ভাগ কম। ২০১০ সালে যা ছিল ১৮ দশমিক ৫৪ ভাগ। তখন যানবাহন ছিল ১৪ লাখ ২৭ হাজার। এখন যানবাহনের সংখ্যা ৫৫ লাখ ৯২ হাজারের বেশি।
এখন থেকে প্রতি মাসের পাঁচ তারিখে পুলিশের ডেটাবেজ নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, অনেকেই ইচ্ছেমতো সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করছে। বাড়তি মৃত্যুর তথ্য জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
তিনি বলেন, প্রমাণ ছাড়াই ইচ্ছেমতো দুর্ঘটনার তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। তথ্য চাইলে টাকা চাইছে। এটা কেমন কথা। গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চারধাপ নিচে নামার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা চাওয়ার কথাও জানান সড়ক সচিব।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন সম্পর্কে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, দুর্ঘটনা সম্পর্কে আমরা সত্য তথ্য চাই। এ ব্যাপারে শতভাগ শততার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটা সত্য যে, কোনোভাবেই শতভাগ সঠিক ডেটা তৈরি সম্ভব নয়। তবে দুর্ঘটনা রোধে আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। একেক সংগঠনের ভিন্ন ভিন্ন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে আমরা বিতর্ক চাই না।
বাসে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মালিকদের এ ব্যাপারে বললে তাদের জবাব- এসব অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। তবে বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে সঠিক তথ্য-প্রমাণ পেলে বিআরটিএ ব্যবস্থা নেবে। রাইড শেয়ারিং ফি ও নীতিমালা আপডেট করার জন্য পৃথক কমিটি হয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে আপত্তি রয়েছে সেগুলো সংশোধন করা যেতে পারে।
পুলিশের পক্ষ থেকে অংশ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের অপরাধ বিষয়টি ডেটাবেজ বিআরটিএকে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই ডেটাবেজ ব্যবহার করলে একজন চালকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, সে কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কি না- তা দেখা যাবে। পুলিশের এই প্রস্তাবে সায় দেন সড়ক সচিব।
নিউজনাউ/আরএইচআর/২০২৩