নিউজনাউ ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সব বিভাগীয় সদরে শনিবার সমাবেশ করছে বিএনপি।
এদিকে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে সিলেট ও খুলনায় একই দিনে একই নগরীতে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সিলেটে রেজিস্ট্রি মাঠে বিএনপি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে। আর খুলনায় আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করবে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে। কেসিসি মার্কেটের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে মুখোমুখি হয় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ওই দিন খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে নগরের কোর্ট পয়েন্টে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়, আহত হন অনেকে।
এরপর উভয় দল নানা ইস্যুতে রাজপথে সরব থাকলেও কখনো মুখোমুখি হয়নি। প্রায় পাঁচ বছর পর আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দলীয় কর্মসূচি ঘিরে উভয় দল নামছে সিলেটের রাজপথে।
‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’ দাবিতে জানুয়ারিতেই সিলেটসহ সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় নগরের রেজিষ্ট্রারি মাঠে এ সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান।
সমাবেশ সফলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটজুড়ে কর্মী সভা, পথসভা, জনসংযোগের মাধ্যমে সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের চেষ্টা করছেন তারা। সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে দলটির পক্ষ থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
একই দিনে সিলেটে ‘শান্তি সমাবেশ’করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। প্রথমে এই সমাবেশ বিএনপির সমাবেশস্থল রেজিস্টারি মাঠে করার ঘোষণা দেয় দলটি। তবে পরে স্থান পরিবর্তন করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকাল ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হবে। শান্তি সমাবেশ সফলেও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় দলটি।
শান্তি সমাবেশ সফলে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রস্তুতি সভা করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। এতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে স্ব স্ব ওয়ার্ড থেকে মিছিলসহ সমাবেশে অংশ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
একই দিনে উভয় দলের সমাবেশ ঘিরে সিলেটে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কারণে দেখা দিয়েছে সংঘাতের আশঙ্কা।
উভয় দল সিলেটের রাজপথে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে কর্মসূচি আহ্বান করেছে, এমনটিই ধারণা নগরবাসীর।
যদিও উভয় দলের নেতারা বলছেন, সিলেটে সম্প্রীতির রাজনীতি বিদ্যমান। অতীতেও কখনো কর্মসূচি নিয়ে উভয় দলের সংঘাত হয়নি। সেই কৃষ্টি এবারও বজায় থাকবে।
তবে উভয় দলের কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। তাই সংঘাত এড়াতে সিলেটে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুই দলের সমাবেশ ঘিরে সাজোয়া যানসহ মাঠে অবস্থান করবে অন্তত ৩ শতাধিক পুলিশ সদস্য।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা সব সময় শান্তির পক্ষে। বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করলে সংঘাত হবে না। আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তারা ২০১৮ সালে সন্ত্রাস করেছে, এর জবাবও মানুষ ভোটের মাধ্যমে দিয়েছে।
সমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলা হবে না জানিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই। নেতাকর্মীদেরও বলেছি, সমাবেশের দিকে নজর দিতে। কোনো বিশৃঙ্খলায় না জড়াতে।
এদিকে খুলনা নগরীর কেসিসি মার্কেটের সামনে ‘বিভাগীয় সমাবেশ’ আয়োজনে প্রস্তুতি সেরেছে বিএনপি। একই দিনে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ। দুই দলের নেতাদের কাছ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, একই দিনে ও সময়ে নগরীতে দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কথা মাথায় নিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, শনিবার বিকেল ৩টায় শিববাড়ি মোড়ে তাদের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানার পরিচালনায় ওই বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
অন্যদিকে খুলনা মহানগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার দুপুরে শহীদ হাদিস পার্ক সংলগ্ন কেসিসি মার্কেটের সামনে তারা সমাবেশ করবে। এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশের জন্য সোনালী ব্যাংক চত্বর বা শহীদ হাদিস পার্ক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) থেকে বিএনপিকে কেসিসি মার্কেটের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অনুমতি পাওয়ার পর সমাবেশস্থলে শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে মাইক টানানো শুরু করে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, কেসিসি মার্কেট ও জেলা পরিষদের সামনের সড়কে থানার মোড় অভিমুখী মঞ্চ হচ্ছে। খুলনা মহানগর ও জেলাসহ বিভাগের অন্য সব জেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন।’
খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল-মামুন বলেন, ‘শনিবার যেহেতু দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের একাধিক ইউনিটের পাশাপাশি সিভিল পোশাকে গোয়েন্দারা শহরের গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে বস্থান করবেন।
নিউজনাউ/আরবি/২০২৩