তানভীর হোসাইন চৌধুরী তপু: মিরসরাইয়ের প্রথিতযশা ব্যবসায়ী এস.রহমান ১৯৪৪ সালে কলকাতায় ব্যবসা শুরু করেন এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর চট্টগ্রামে 'ওরিয়েন্ট বিল্ডার্স কর্পোরেশন' নামক একটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে তিনি অনেক রাস্তা, ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তুলেন। ১৯৬০ সালের দিকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এস.রহমান।
পর্যটন শিল্প প্রসারে এস. রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুদূরপ্রসারী।কক্সবাজার যে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনশিল্প ভূমি হতে পারে তা আঁচ করতে পেরেছিলেন আগে থেকেই। কক্সবাজারকে বিদেশী পর্যটকদের কাছে পরিচিত করার সুবিধার্থে তাদের ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন 'হোটেল সায়মন'। তদুপরি, পর্যটকদের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে ২০ টি মার্সিডিস গাড়ির বহর চালু করেন। ১৯৬৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংগঠনিক কাজে কক্সবাজারে আসলে সেই সময় তরুণ স্বপ্নবাজ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আমন্ত্রণে হোটেল সায়মনে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে অংশ গ্রহণ করেন।
বনেদী পরিবারে ও ব্যবসায়িক ভাবে সফল পরিবারে জন্ম নেয়া ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১৯৬৬ সালে লাহোরের ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি সম্পন্ন করে চাইলেই ব্যবসায়িক ভাবে সফল হবার জন্য নিশ্চিত জীবনের পথে পা বাড়াতে পারতেন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়া পারিবারিক মূল্যবোধের তাড়নায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন রাজনীতিকেই ব্রত হিসেবে, নিয়তি হিসেবে মেনে নিলেন।
রাজনীতি করতে এসে মুক্তিযুদ্ধসহ জন্মভূমির সম্মান রক্ষার প্রশ্নে, জাতির জনকের প্রশ্নে, নেত্রীর প্রশ্নে বহুবার জীবন মৃত্যুর মুখোমুখী হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট চত্বরে তৎকালীন বিএনপি'র সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রমণের শিকার হন, এমনকি পায়ের রগ কেটে দেয়। '৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনার মিছিলে পুলিশ কর্তৃক গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করার ঘটনায় তিনিও মারাত্মকভাবে আহত হন। '৯২ সালের ৮ মে ফটিকছড়িতে জামায়াত ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হয়ে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সেই রাজনৈতিক মহীরূহ, যিনি তাঁর রাজনৈতিক মেধা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে এ জনপদের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষে দিনরাত এক করে কাজ করে গিয়েছেন। জায়গা করে নিয়েছেন মিরসরাই তথা চট্টলবাসীর হৃদয়ের মণিকোঠায়।।
পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আভিজাত্য আর প্রবাসজীবনের নিশ্চিত হাতছানিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে মিরসরাইয়ের ধূলো-কাদা-পলিমাখা পথ থেকে পথে হেঁটে বেড়াচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সুযোগ্য সন্তান আইটি বিশেষজ্ঞ মাহবুব রহমান রুহেল। বাড়ি থেকে বাড়িতে, ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে, ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে সাংগঠনিক, সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যেভাবে মাহবুব রহমান রুহেল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাতে অতি সম্প্রতি মিরসরাইয়ের নব্য আওয়ামী রাজনীতিতে হাতেখড়ি দেয়া পরিযায়ী পাখির দল ঈর্ষান্বিত হয়ে কুৎসা রটনায় ব্যতিব্যস্ত।
জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতিবারই আমরা এহেন কিছু জাতীয়তাবাদী পরিবার থেকে বংশদ্ভূত পরিযায়ী পাখির দলের অস্তিত্ব লক্ষ করি যারা জীবনে কখনো জয়বাংলার স্লোগান না দিয়ে, গায়ে আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশ ধারণ করে নৌকার ইমেজ সংকট তৈরি করার কূটচালের ছক তৈরি করে।
অতিসম্প্রতি চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে বিগত সময়ে ধানের শীষে মনোনয়ন প্রত্যাশী জ্বালাও পোড়াও, খুন ঘুমের রাজনীতিতে বিশ্বাসী বিএনপি পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যবসায়ী ও নব্য রাজনীতিবিদ নিয়াজ মোর্শেদ এলিট তাঁর ব্যক্তিগত বানানো ভিডিও দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু অনলাইন গণমাধ্যমে উল্লেখ করেন তার নিজবাড়িতে হুইলচেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানে তার উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, 'হামলাকারীরা ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো হবে, কিন্তু ভিডিওতে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করলে ১৫ থেকে ১৭ জন্য লোকের বেশি দেখা যায়নি।
আরেকটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাবে, ব্যবসায়িক সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানকে যুবলীগের কার্যক্রম হিসেবে চালিয়ে দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা এলিট করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে!
ভিডিওতে সূক্ষভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, এক ব্যক্তিকে ডেকে কথাচ্ছলে অপ্রস্তুত ভিডিও করার চেষ্টা করলে ব্যক্তিটি প্রতিবাদও জানায় কেন ভিডিও করা হচ্ছে এ ব্যাপারে?
উপরন্তু নিয়াজ মোর্শেদ এলিট মিরসরাই উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আরশাফুল কামাল মিঠু ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানা'র নাম উল্লেখ করলেও মূলত তাদের দুজনের কারোর উপস্থিতি বা সম্পৃক্ততা পরিলক্ষিত হয়নি।
নিয়াজ মোর্শেদ অভিযোগ করেন ২টা ককটেল বিস্ফোরন ও চার পাঁচটা ওপেন ফায়ার দেয়া হয়। গণমাধ্যমে তার দেয়া বক্তব্য খেয়াল করলে দেখা যাবে তার উপস্থিতিতে এধরনের কোন ঘটনা হয়নি কিংবা এমন ঘটনার কোন আলামতও বাস্তবিক পক্ষে সংবাদমাধ্যম ঘেঁটেও পাওয়া যায় নি।
একটি গণমাধ্যমের নিউজ ক্লিপসে তিনি বলেন, 'লাইন্সেস করা প্রটেকশন নিয়ে চলি...যারা হামলা করে তাদের প্রত্যেকের আরএস, বিএস এর হিসেব দিতে হবে..।'
রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা থাকাটা সহজাত। তবে সে দিবাস্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে পারিবারিক আদর্শ থাকতে হবে, মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে মিশতে হবে, মানুষের পার্লস বুঝতে হবে।সর্বোপরি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথা দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আভাস পেয়ে যারা কালেভদ্রে মিরসরাইয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর শ্রম-ঘাম-ত্যাগে তৈরি হওয়া আওয়ামী লীগের দূর্গতে আঁচড় দিতে চাইবে, তারা যতবড় ব্যবসায়িক নেতা হোক না কেন মিরসরাইবাসী তাদের সময়োচিত দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার মতো কলিজা রাখে।
অতএব, সাধু সাবধান!!
লেখক: সভাপতি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ।