নিউজনাউ ডেস্ক: দেশে ডলার সংকটের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে চীনা চলমান প্রকল্পগুলো। এরইমধ্যে যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ঋণ পরিশোধ শুরুর এক বছরের মধ্যেই কিস্তি পরিশোধ নিয়ে বিপদে পড়েছে। সাথে যোগ হয়েছে কাঁচামালের স্বল্পতা। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়লা আমদানির ঋণপত্র খুলতে দেরি করছে, যার কারণে কয়লা আমদানি করতে না পেরে কমছে কেন্দ্রটির মজুদ। বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে কয়লা সংকটের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ দেশের বিভিন্ন খাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে বাস্তবায়নাধীন এমন আরো বেশকিছু মেগা প্রকল্পে এখন চীনের বিনিয়োগ রয়েছে।
অর্থনীতির পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হলে এ নিয়ে বড় ধরনের বিপত্তিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ছাড়াও সড়ক যোগাযোগ, রেলওয়ে ও সেতু নির্মাণ খাতের বড় প্রকল্পগুলোয়ও বিপুল পরিমাণ চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। এরই একটি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। ইআরডি জানিয়েছে, প্রকল্পটিতে চীনা ঋণ প্রায় ২৬৭ কোটি ডলার। এ প্রকল্পে প্রধান অর্থায়নকারী চায়না এক্সিম ব্যাংক।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। এটি নির্মাণে অর্থায়নের বড় অংশ এসেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে। ২০ বছর মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে চীন থেকে। প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটের (পিবিসি) আওতায় চীনা এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির ঋণের অর্থ পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ২ শতাংশ সুদে ২০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মীয়মান ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৪৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ১৭৬ কোটি ডলারের ঋণ অর্থায়ন হয়েছে চীনা উৎস থেকে। অর্থায়ন করছে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ব্যাংক অব চায়না ও চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাতে ঋণ ও অনুদান হিসেবে মোট ১ হাজার ৭৭ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এর মধ্যে প্রায় ৬৪৪ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। অনুদান হিসেবে এসেছে খুব সামান্য। সিংহভাগই ঋণ।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগের দুই বছরে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ কোটি ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে সাতটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শীর্ষ পাঁচটিই ছিল চীনের। ওই দুই বছরে ব্যাংক অব চায়না, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়না (চায়না এক্সিম ব্যাংক) ও চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক—এ তিন ব্যাংকের প্রতিটি বাংলাদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ৫৯ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ঋণ দিয়েছে ৪৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার কাছ থেকে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েছে ৪০ কোটি ডলার।
ডলার ও জ্বালানি সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি চলমান থাকলে ভবিষ্যতে বিদেশী ঋণ নিয়ে বিপত্তির মাত্রা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরা। বিশেষ করে চীনা ব্যাংকগুলো থেকে গৃহীত ঋণ নিয়ে তাদের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো এসব ব্যাংক ঋণের ওপর সুদহার ধার্য করে অন্যান্য উৎসের চেয়ে অনেক বেশি। ঋণের বোঝা বাড়ানোর পাশাপাশি তা দেশের বৈদেশিক রিজার্ভেও বড় চাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
নিউজনাউ/আরবি/২০২৩