alo
ঢাকা, বুধবার, মার্চ ২২, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

সীমা অক্সিজেনের পরিচালকের কোমরে দড়ি, বিজিএমইএ’র ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ, ২০২৩, ০১:৫৩ পিএম

সীমা অক্সিজেনের পরিচালকের কোমরে দড়ি, বিজিএমইএ’র ক্ষোভ
alo

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের হতাহতের মামলায় কারখানা পরিচালক পারভেজ উদ্দিন শান্টুকে গ্রেপ্তারের পর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে শিল্প পুলিশ কর্তৃক তাঁর কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যাওয়ার মত চরম অবমাননাকর ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। 

এ’ধরনের আইন বর্হিভূত ও গর্হিত কাজে যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নিছক অনাকাঙ্খিত একটি দুর্ঘটনা। 

তিনি এ ঘটনায় উক্ত অক্সিজেন প্ল্যান্ট ভস্মিভুত হওয়া সহ জানমালের প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। 

বিবৃতিতে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি বলেন, উদ্যোক্তাগণ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনপূর্বক তা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্তরে চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় জনবল  নিয়োজিত রাখেন, এক্ষেত্রে উক্ত প্ল্যান্টেও অগ্নি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কাজে নির্ধারিত কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিল। অগ্নি দুর্ঘটনা পরবর্তীতে যথাযথ তদন্তপূর্বক জড়িতদের চিহ্নিত না করেই একজন শিল্পোদ্যোক্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে অপমানজনকভাবে কোমরে দড়ি বেধে আদালতে উপস্থাপন করায়  শিল্পমালিক মহলে ভীষণ ক্ষোভের  সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণীর শিল্প উদ্যোক্তাগণ চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এ’ধরণের কর্মকাণ্ড সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’র বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলার পায়ঁতারা বা সাবোটাজ কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় শিল্প মালিকগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক সহযোগীতায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যাপক শিল্পায়নে প্রানান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ’ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার ফলে ব্যবসা বাণিজ্য সহ শিল্প প্রসারে উদ্যোক্তাগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে; যা বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় দেশের শিল্পায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে মর্মে তিনি আশকঙ্কা ব্যক্ত করেন। 

তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্প উদ্যোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন ও সম্মান নিশ্চিতকরণ সহ ভবিষ্যতে এ’ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনা অনাকাঙ্খিত ও দুর্ঘটনা উল্লখ করে বিজিএমইএ’র পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব নিউজনাউকে বলেন, ‘শ্রম আইনে ২ লাখ টাকা নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও কারখানা মালিক কিন্তু ১০ লাখ টাকা করে দিয়েছে। এর ওপর সেই মালিকের কোমরে দড়ি বাঁধলে বাংলাদেশে তো নতুন ব্যবসায়ী সৃষ্টির অন্তরায় হবে সেটা। এমনিতেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাংলাদেশে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চায় না।’ 

বয়লার ইন্সপেক্টররা ঘুষ ছাড়া লাইসেন্স দেয়না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারখানা তো বয়লার ইন্সপেক্টরও পরিদর্শন করেন। ওনারা তো ঘুষ ছাড়া লাইসেন্স দেয় না। এরকম আরও অনেক অথরিটি আছেন। তাদের কারও কোমরে রশি লাগলো না, কোভিডের সময়ে যে অক্সিজেন প্ল্যান্ট সবার আগে চট্টগ্রামে সেবা দিয়েছে সেই কারখানা মালিকের কোমরে দড়ি কেন? কিছুক্ষেত্রে তো সামাজিক দায়িত্বও আছে। আমার মনে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটা।’

যে কর্মকর্তা এ কাজটি করেছে তার পেছনে কোনো ইন্ধনদাতা থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শুধু কারণ দর্শানো বা সাসপেন্ড করলে সেটাতো হলো না। আমরা একটা দৃষ্টান্ত চাচ্ছি। তারা বলুক ভবিষ্যতে আর এরকম অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটবে না। বাংলাদেশে এরকম অনেক শোকজ হয়। এটা থেকে সহজভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় বিধায় একই ঘটনা বারবার ঘটে। যে পুলিশ কর্মকর্তা এ ধরণের কাজ করেছে সে কারও ইন্ধনে বা প্ররোচনায় এ কাজ করেছে কিনা সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন। ঘটনার দিন রাতেই আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ওই কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে দুইদিন সময় বাড়ায় কমিটি। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন যান জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। ওইদিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক জানিয়েছেন, তদন্তে কারখানা পরিচালনায় মালিকপক্ষে অবহেলার প্রমাণ তারা পেয়েছেন।

নিউজনাউ/আরএইচআর/২০২৩
 

X